প্রকাশিত: ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১২:০১:০৯
বান্দরবান জেলা যুবদলের ঘোষিত কমিটি নিয়ে জেলাজুড়ে তীব্র সমালোচনা ও বিতর্ক শুরু হয়েছে। তৃণমূলের অভিযোগ-ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে কোটি টাকার বাণিজ্যের মাধ্যমে সভাপতি জহির উদ্দীন মাসুম ও সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম চৌধুরী আত্মীয়স্বজন, প্রবাসী, আওয়ামী দোসর, এমনকি তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী ও দাগি আসামিদের পদে বসিয়েছেন। এতে তৃণমূলে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।
১ মে জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন ১০১ সদস্যবিশিষ্ট এ কমিটির অনুমোদন দেন। এতে সভাপতি হন জহির উদ্দীন মাসুম এবং সাধারণ সম্পাদক হন আরিফুল ইসলাম চৌধুরী।
স্থানীয় বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেছেন, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কমিটি গঠনের নামে কোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন। যারা টাকা দিয়েছেন, তারাই পদ পেয়েছেন। অথচ আন্দোলনের রাজপথে বছরের পর বছর জেল-জুলুম খেটে আসা ত্যাগী নেতাদের ঠাঁই হয়নি কমিটিতে।
ঘোষিত কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে অ্যাডভোকেট আমিন উল্লাহ বিপ্লব, সাখাওয়াত হোসেন রিয়াদ, সাইদুল ইসলাম শুক্কুর ও কাজি হেলাল উদ্দীনকে। আমিন উল্লাহ বিপ্লবের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে, তিনি কখনো বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না বরং তিনি ছিলেন জামায়াত ঘোষিত প্রার্থী আবুল কালামের সহযোগী। সাখাওয়াত হোসেন রিয়াদ রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্ক নেই, একটি এনজিওতে চাকরি করেন। সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলামের বড় ভাইয়ের মেয়ের জামাই হওয়ার সুবাদে নাম এসেছে তালিকায়। সাইদুল ইসলাম শুক্কুর সভাপতি মাসুমের খালাতো ভাই। দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকা সত্ত্বেও তার নাম স্থান পেয়েছে কমিটিতে। কাজী হেলাল উদ্দীনের বিরুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। ৫ আগস্টের পর তিনি বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
সভাপতি মাসুমের ছোট ভাই জমির উদ্দীন চৌধুরী মাহফুজ পেয়েছেন সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ। সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলামের ভাতিজা ইমাম হোসেন চৌধুরীও একইভাবে সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন। দপ্তর সম্পাদক ফারুক আহমেদ, সভাপতি মাসুমের ব্যবসায়িক পার্টনার। রাজনীতির সঙ্গে কখনো যুক্ত ছিলেন না।
আব্দুল মান্নান (সহ-কৃষি সম্পাদক), আব্দুস সবুর (সহ-সমাজকল্যাণ সম্পাদক) এবং ওসমান গণি (পল্লী উন্নয়ন সম্পাদক) অতীতে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
ইয়াবা মামলার তালিকাভুক্ত আসামি মো. আলী মোহাব্বত হয়েছেন গ্রাম সরকার সম্পাদক। পাহাড়ি মেয়ে ধর্ষণ ও অপহরণের মামলার আসামি মো. মোজাম্মেল হয়েছেন সহ-মৎস্য ও পশুপালন সম্পাদক।
আওয়ামী নেতা বিপ্লব বড়ুয়ার ঘনিষ্ঠ সহচর তাপস দত্তের একান্ত সহকারী যুবলীগ নেতা লোকমান হয়েছেন জেলা যুবদলের স্বাস্থ্য সম্পাদক। পাহাড় কাটার অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত নাজিম উদ্দীন হয়েছেন কমিটির সদস্য।
কমিটিতে স্থান না পাওয়া ত্যাগী নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ত্যাগীদের মূল্যায়ন করে নতুন করে কমিটি গঠন করতে হবে। এই বিতর্কিত কমিটি দ্রুত প্রত্যাহার করতে হবে। যারা বছরের পর বছর জেল-জুলুম খেটে বান্দরবানের মাটিকে যুবদলের ঘাঁটিতে পরিণত করেছেন, তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। অচেনা মুখ ও সুবিধাবাদীদের দিয়ে নিকৃষ্ট একটি কমিটি করা হয়েছে। তারা হুঁশিয়ারি দেন, আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে যেমন রাজপথে আন্দোলন চালিয়েছি, তেমনি দলীয় ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধেও আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে লড়ব।
সভাপতি জহির উদ্দীন মাসুমের বিরুদ্ধে অভিযোগ-তিনি বান্দরবান জিপ, মাইক্রোবাস ও সিএনজি স্ট্যান্ড দখল করে নিয়মিত চাঁদা আদায় করছেন। জোরপূর্বক আধিপত্য বিস্তার করে শ্রমিক আইন লঙ্ঘন এবং নিজেকে স্বঘোষিত সভাপতি দাবি করে বান্দরবানের অধিকাংশ স্ট্যান্ড দখল করে নিয়মিত চাঁদা আদায় করে আসছেন জহির উদ্দিন মাসুম সিন্ডিকেটের সদস্যরা।
সম্প্রতি রাজবিলা ইউনিয়নের ৯৫ লাখ টাকার সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প জোরপূর্বক দখল করে নিন্মমানের সামগ্রী ব্যবহার করে তড়িঘড়ি করে সড়ক নির্মাণের নামে সরকারি অর্থ লোপাট করে যাচ্ছেন। একই ভাবে সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধেও রয়েছে চাঁদাবাজি ও জোরপূর্বক টোল আদায়ের অভিযোগ। বান্দরবান সদর উপজেলার জামছড়ি ইউনিয়নের বাগমারা বাজারে জোরপূর্বক টোল আদায় করায় স্থানীয়রা তার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছেন। তার ভাই তৈয়ব চৌধুরী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার মামলার আসামি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা যুবদলের সভাপতি জহির উদ্দিন মাসুম যুগান্তরকে জানান, আমাকে রাজনৈতিক ভাবে হেয়প্রতিপন্ন করতে একটি মহল জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। পরে আপনার বিরুদ্ধে, মাইক্রোবাস, সমিতি দখল আওয়ামী লীগের দোসর, মাদক কারবারি, অপহরণ মামলার আসামি, নিজ পরিবারের লোকজনকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা ও অর্থের বিনিময়ে প্রবাসে অবস্থানরত ব্যক্তিকে যুবদল কমিটিতে পদপদবি বিক্রি করা হয়েছে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো সদুত্তর না দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করলে প্রতিবেদককে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে ফোন কেটে দেন।
পরে সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে তার মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম নয়ন বলেন,যদি বান্দরবান জেলা যুবদলের কমিটিতে আওয়ামী লীগের দোসর, মাদক কারবারি, অপহরণ মামলার আসামি কমিটিতে থাকেন ও জেলা যুবদলের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে কমিটিতে অর্থের বিনিময়ে নাম অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগ পাওয়া যায় আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।
প্রজন্মনিউজ২৪
বরগুনাতে চাঁদা দাবি ব্যবসায়ীকে প্রাণনাশের হুমকি
জুলাইয়ে ছাত্রদল নেতা ওয়াসিম হত্যা মামলার আসামি গ্রেপ্তার
হ্যাঁ’ এবং ‘না’ পোস্টে কেন ফেসবুকে তোলপাড়...
দেশ গড়তে শুধু নেতা নয়, নীতিরও পরিবর্তন করতে হবে : মাসুদ সাঈদী
খুনি আ.লীগকে রাস্তায় পাইলেই জনগণের শরীরে একটা ‘জোশ’আসে
হাসিনাসহ পলাতকদের হাজিরে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ
আগুনের ঘটনাগুলো ‘সন্দেহজনক’, মির্জা গালিবের সতর্কবার্তা
শিশুদের কোরআন শিক্ষার মক্তব ঘর দখল করে বিএনপি কার্যালয়
রংপুরে বিএনপি নেতাসহ ৩২ জন জামায়াতে যোগ দিলেন
চবিতে ছাত্রদলের অন্তঃকোন্দল, নির্বাচনের আগে সিনিয়র সহ-সভাপতি বহিষ্কার